শেষ চিঠি
ভাববেন না আমি কথাগুলো আবেগের বসে বলছি।
না আমি কোন আবেগের বসে বলছি না। আর সেই অধিকার এখন আর আপনার কাছে আমার নেই। আর কোন দরকার বা প্রয়োজন কোনটাই আপনার কাছে নেই। কারণ এই চিঠি যখন লিখছি, তখন আপনার সাথে আমার সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তবু নিজের অবস্থান টা জানিয়ে যেতে না পারলে মনে শান্তি পাব না। তাই চিঠিটা লিখলাম।
”
মেয়েটা আপনারও যেমন ছিল, ঠিক আমারও কিন্তু ছিল। মানে, দুজনেরই ছিল। ওকে যখন আমি নয় মাস পেটে ধারণ করেছিলাম, তখন কিন্তু ও আমার রক্ত মাংস চুষে খেয়ে ধিরে ধিরে বড় হচ্ছিল। আস্তে আস্তে। আপনার কি মনে আছে, যেদিন প্রথম ওর আগমনের বার্তা পেলাম, মনে পরে কতো আনন্দ উল্লাস করেছিলাম। কতো সুখের স্বপ্ন দেখেছিলাম দুজন মিলে?
আমার নাড়ি ছিড়ে যখন ও বেরোয়, একটিবারের জন্য আমার ভীষণ রকম বোধকরি আমি আর হয়তো বাঁচব না। তখন শুধু মনে হচ্ছিল শেষবারের জন্য হলেও অন্তত নিজের মায়ের মুখখানা দেখিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হলো, যে আমার শরীরে বেড়ে উঠছে অন্য আরেক আমি, সে বেঁচে থাকলেই আমার বেঁচে থাকা।
তখন মনে হলো, না। এমন মৃত্যুতে ভয় কিসের?
এ মরন যে বীরাঙ্গনার মৃত্যু।
”
যখন মেয়েটা পৃথিবীতে এলো, আমাদের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে?
ওকে ঘিরে কতো স্বপ্ন, কতো খেয়াল আমাদের।
গভীর রাতে যখন মেয়ে ভীষণ চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করতো, আমি তাড়াতাড়ি করে মেয়েকে বিছানা থেকে সরিয়ে পাশের রুমে নিয়ে যেতাম, যাতে আপনার ঘুমের অসুবিধা না হয়। ওর কখনো একটু জ্বর আসলেই আমি ভীষণ রকম চিন্তায় পড়ে যেতাম।
”
আপনি, আপনার মায়ের কথা শুনে আমাকে তালাক দিলেন। আপনি আপনার মায়ের এবং আসেপাশের লোকজনের কথা শুনেছিলেন। তারা বলছিল আমার কেন একফোঁটা চোখে জল নাই। প্রশ্নটা নিজের প্রতি আমারও ছিল। পরে আবার মনে হলো, ওর জন্য যা কাঁদার আমিত জায়নামাজেই বসে কেঁদেছি। আর কোন জল যে, আমার চক্ষু কোটরে অবশিষ্ট নেই। তাহলে কোথা থেকে আসবে জল?
”
আমি কাঁদিনি, বিলাপ করিনি। বুক চাপড়াইনি। কেবল পাথরের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আপনাদের প্রশ্নন্মুখ চেহারা, অভি মূর্তি আমাকে কাঁদাতে পারেনি।
কেন জানেন?
অনেকদিন আগে আমি একটা হাদিস পড়েছিলাম কিন্তু কে জানতো সেই হাদিস ই একদিন আমার এমন সময়ে শান্ত থাকতে কাজে আসবে।
হাদিসটি বলছি শুনুন………..
”
যখন আল্লাহর কোন বান্দার সন্তান মারা যাবে, তখন আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার জান কবজ করে ফেললে?
”
ফেরেশতারা বলেন, জি।
”
তখন আল্লাহ আবার বলেন, তোমরা আমার বান্দার প্রাণ-কণাটাকে ছিনিয়ে আনলে?
”
ফেরেশতারা আবার বলল, জি।
”
আল্লাহ, বললেন, তখন আমার বান্দা কেমন আচরণ করেছে?
”
ফেরেশতারা বলে, তখন আপনার বান্দা ধৈর্য ধারণ করেছে আর বলেছে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহ’র কাছে থেকে এসেছি এবং তার কাছেই আমরা পূণরায় ফিরে যাবো।
”
ফেরেশতাদের কাছে বান্দার এমন ধৈর্যের কথা শুনে মহান আল্লাহ মালিক বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মান করো, এবং সেই বাড়ির নাম দাও, প্রশংসিত বাড়ি।
”
আমি বিশ্বাস করি, আমার সন্তান আমাকে ছেড়ে কোথাও যায়নি। ওর সাথে আমার সাময়িক একটা বিচ্ছেদ ঘটেছে মাত্র। কিন্তু জান্নাতে, সেই প্রশংসিত বাড়ির উঠানে, সবুজ দূর্বাঘাসের উপর দিয়ে আমি আমার সন্তানের হাত ধরে হাঁটব, ইনশাআল্লাহ।
এই জগতের মানুষ যতই আমাকে অপয়া অলক্ষুণে রাক্ষসী বলুক, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।
তাতে আমার বিচলিত হবার কোন কারণ নেই।
”
ভালো থাকুন আপনি, আপনার আগামীর দিনগুলো সুন্দর হোক।
”
বইটি অর্ডার কনফার্ম করতে চাইলে ইনবক্সে মেসেজ দিন
বই পড়তে ভালোবাসি – তানভীর আহমেদ











